নকল মোবাইল চেনার উপায়

আসল ও নকল মোবাইল ফোন চেনার সহজ উপায়ঃ

কিছু সময়, স্মার্টফোন কিনে কিছু সময় পর দেখা যায় যে এটি আসল নয়। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা ফোন যদি নকল হয়, তবে এটি আনন্দের বিষয় নয়। নকল ফোন কেনার ঝুঁকি কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অফিসিয়াল অফলাইন বা অনলাইন স্টোর থেকে ফোন কেনা। তবে অনেকেই আনুষ্ঠানিক নয় এমন দোকান থেকে ফোন কিনেন। এই প্রতিবেদনে ফোনটির আসল কিনা তা বোঝার জন্য কিছু টিপস আলোচনা করা হয়েছে।


১। বাইরের ডিজাইনের দিকে লক্ষ্য করুনঃ

নকল ফোন চিহ্নিত করার সঠিক জায়গা হলো এর বাইরের ডিজাইন। আসল মডেলের থেকে ক্লোন করা ফোনের বোতামগুলো অনেক সময় সলিড বা ক্লিকি হয় না। বোতামগুলো সাধারণত ভুল জায়গায় থাকে, স্ক্রিনের ব্যাজেল বড় মনে হয় অথবা ক্যামেরার কাঠামো দেখেও সন্দেহ হতে পারে। কিছু ডিভাইস আছে যেগুলোকে মাস্টার কপি বা মাস্টার ক্লোন বলা হয়, যেগুলোর ডিজাইন দেখে নকল বলা কঠিন, এগুলো ব্যবহার না করলে বোঝা যায় না।


২. স্ক্রিন ও ইউআই যাচাই করুনঃ

আনুষ্ঠানিক দোকান থেকে ফোন কিনার আগে ফোনটি অন করে স্ক্রীন কোয়ালিটি চেক করে নিন। স্ক্রীন কোয়ালিটি থেকে অনেক কিছু বোঝা যায়। এরপর ফোনের ইউআই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। অফিসিয়াল আইকন কেমন, সেটাও যাচাই করুন। প্রয়োজনে ইউটিউবে দেখে নিন ফোনের আসল ইউআই। ফোনে থাকা পূর্বনির্ধারিত অ্যাপগুলোর দিকে নজর দিন; যদি অস্বাভাবিক অ্যাপ থাকে, তবে ফোনটি নকল হতে পারে।


৩. পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুনঃ 

ফোন ব্যবহার করে তার পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুন। ক্লোন ফোনগুলোর মধ্যে পুরোনো এবং দুর্বল প্রসেসর থাকে, যা সাধারণত ল্যাগ, ধীর গতি এবং অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণ হয়। এগুলো লক্ষ্য করলে ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকুন।


৪. আইএমইআই নম্বর যাচাই করুনঃ

আপনার ফোন আসল নাকি নকল, তা জানার জন্য আইএমইআই নম্বর যাচাই করতে পারেন। যদিও এভাবে 100% নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না, কারণ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের আইএমইআই নাম্বারও ক্লোন করা সম্ভব। কিন্তু এটি না চেক করার কোনো কারণ নেই।

বেশিরভাগ ফোনের বাক্সে আইএমইআই নম্বর থাকে অথবা ফোনটি অন করে ০৬ চাপলে আইএমআই নম্বর পাওয়া যাবে। এরপর এই নম্বরটি imei.info সাইটে প্রবেশ করান; সেখানে ফোন মডেল দেখতে পাবেন। যদি মডেলটি আপনার ফোনের সাথে মেলানো না হয়, তবে ফোনটি ক্লোন বা নকল হতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইএমইআই নম্বর যাচাইয়ের সুবিধা চালু করেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজেই জেনুইন ফোন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এজন্য মোবাইল ফোন কেনার সময় মেসেজ অপশন খুলে KYD লিখুন, তারপর স্পেস দিয়ে আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠান। ফিরতি মেসেজে জানাবে ফোনটি বিটিআরসির সার্ভারে নিবন্ধিত আছে কি না।


৫. ক্যামেরা টেস্ট করুনঃ

ক্যামেরার পরীক্ষা করুন: ক্লোন ফোনের একটি প্রধান দুর্বলতা হলো এর ক্যামেরা। সাধারণত, এসব ফোনের ক্যামেরার গুণগত মান খুব খারাপ হয়ে থাকে। যদি আপনি খুঁজে পান যে ছবির গুণগত মান অত্যন্ত শোচনীয়, তাহলে এটা স্পষ্ট যে ফোনটি নকল। সঠিক ওয়েবসাইটে গিয়ে সেই ফোনের ক্যামেরার মেগাপিক্সেল সংখ্যা বা কতগুলি সেন্সর আছে, তা দেখুন। এরপর, আপনাকে অনলাইনে ফোনের আসল ক্যামেরার ছবির উদাহরণ দেখতে হবে এবং সেগুলোর সাথে আপনার ফোনের ক্যাপচার করা ছবি তুলনা করতে হবে। যদি দেখা যায়, আপনার ফোনের ছবির বিস্তারিত তথ্য অনলাইনের ছবিগুলোর তুলনায় খুবই নিম্নমানের, তাহলে বুঝতে হবে ফোনটি নকল।


৬. CPU-Z বা AIDA64 অ্যাপ ব্যবহার করুনঃ

নকল ফোনগুলোতে সাধারণত কম মানের প্রসেসর ব্যবহৃত হয়। তাই ফোনের বৈশিষ্ট্যগুলি অফিসিয়াল মানের সাথে তুলনা করা অত্যাবশ্যক। এটি করার জন্য সিপিইউ জেড অ্যাপ ইনস্টল করা একদম সহজ। এই অ্যাপটি ফোনের ভিতরের প্রসেসরের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবে, এমনকি কম মানের সফটওয়্যারগুলির সচেতনতাও দেবে যা ফোনের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ইনস্টল করার পর, আপনি সিপিইউ এবং জিপিইউ এর তথ্য পরীক্ষা করতে পারবেন। এই অ্যাপটি র‌্যাম, রেজ্যুলেশনসহ অন্যান্য তথ্যও দেখাবে। বৈশিষ্ট্যগুলি সত্যিকার কিনা মিলিয়ে দেখতে এআইডিএ৬৪ অ্যাপও ইনস্টল করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধীরা এখন অনেক অভিজ্ঞ। সিপিইউ জেড ধরনের অ্যাপ থেকেও সবসময় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। প্রতারকরা নকল ফোনে সঠিক প্রসেসরের মডেল এবং র‌্যামের পরিমাণ থাকতে পারে, যা আসলে ত্রুটিপূর্ণ।


৭. AnTuTu Officer অ্যাপ দিয়ে যাচাই করুনঃ

AnTuTu Officer অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে, অন্য একটি ফোনে ডেটা চালু করে ওয়াইফাই হটস্পুট তৈরি করুন এবং তারপর যে ফোনটি কিনতে চান, সেটিকে হটস্পটের সাথে সংযোগ করুন। নতুন ফোনে প্লে স্টোর থেকে অ্যানটুটু অফিসার ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। এরপর, আপনার পুরানো ফোনের ব্রাউজারে গিয়ে y.antutu.com লিংকটি খুলুন, সেখানে একটি কিউআর কোড দেখতে পাবেন। সেই কোডটি নতুন ফোনের অ্যানটুটু অফিসার অ্যাপ ব্যবহার করে স্ক্যান করুন। কোডটি স্ক্যান হওয়ার পর আপনার পুরানো ফোনে জানানো হবে ফোনটি আসল কি নকল। সবুজ সংকেত দেখালে বুঝবেন ফোনটি আসল, আর লাল সংকেত দেখা গেলে ফোনটি নকল।


 

2 thoughts on “নকল মোবাইল চেনার উপায়”

  1. খুব সুন্দর উপস্থাপনা। এভাবেই চালিয়ে যাও সামনের দিকে। নিজের এবং সামাজিক উন্নয়নে।

    Reply

Leave a Comment